Image

The Journey Of Humanity

সেইন্টমার্টিন— এক টুকরো বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ

৩০ মে  ২০১৭, ঘূর্ণিঝড় মোরায় লণ্ডভণ্ড হয়েছে সেইন্টমার্টিন।

ইচ্ছেকুঁড়ি নামে একটি সংগঠনে যুক্ত আমরা কিছু তরুণ মিলে সিদ্ধান্ত নিই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবো। যে ক্ষতটুকু তিন বর্গমাইলের অঞ্চলটুকুতে হয়েছে যেখানে মাত্র ১৫.১৩% সাক্ষরতার হার। তাদের স্কুলের টিনের চালটাও নাকি উড়ে গেছে। প্রতি বর্গমাইলে বসবাসরত ২২০০ মানুষের কষ্টটা আমাদের দূর হতে ছুঁয়ে যায়। অনলাইন ক্যাম্পেইন করে আমরা তিন দিনে ১,২০,০০০ টাকার ব্যবস্থা করে ফেলি। ময়মনসিংহ মেডিকেল, আইচি মেডিকেল, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে যুক্ত হয়ে যাই সেইন্টমার্টিনের স্বার্থে। আমি প্রথম সেইন্টমার্টিন যাচ্ছি। তবু অদ্ভুতভাবে পর্যটক হয়ে নয়, একজন ভলান্টিয়ার হয়ে। জুনের ৪ তারিখ, ২০১৭ সাল। রমজান মাস চলছে। সেইন্টমার্টিন পরিবহণে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাহন নামক একটা অর্গানাইজেশন এর ৪ জন সহ আমরা রওনা হই। ওদিকে আরেকটা টিম আগেই চলে গেছে সেইন্টমার্টিনে।  সত্যি বলতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশিও আমার ভেতর বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে দেখার উন্মাদনা কাজ করছিলো। সকাল ১০টায় আমরা পৌঁছাই টেকনাফে। এর মাঝে অপর টিম জানিয়েছে সেইন্টমার্টিনবাসীর চাল-ডালের সমস্যা নাই। তাদেরকে নৌবাহিনী ত্রাণ দিয়েছে। অভাবটা টাকার। আমরা তাই অর্থ সহায়তা দেবো। তখন জাহাজ বন্ধ। পর্যটন মৌসুম শেষ মার্চেই। আকাশ ইদানীং প্রায়ই মন খারাপ করে থাকে কিন্তু আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ— আমরা যাবই ফেনিল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। ট্রলারে উঠে পড়ি নানা বয়সী ছেলে-বুড়ো। হরেক মাল নিয়ে ট্রলার ভরে ওঠে। তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
ভাটায় প্রায় শুষ্ক খাল পেরিয়ে আমরা পড়ি নাফ নদীর বুকে, ওপাশে দেখা যায় ঘোলাটে মায়ানমারের পাহাড়। মাছ ধরা নৌকাগুলো ব্যস্ত নদীর মাছের খোঁজে। শাহ পরীর জেটিতে ট্রলার থামলে এক গোছা মোটা বাঁশ ওঠে ট্রলারে। বুঝতে পারি নতুন ঘর উঠবে আবার। ট্রলার খটখট আওয়াজে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মাঝেই হঠাৎ মাথার উপরের আকাশ কালো করে ঝড়ো বাতাসের নাচন ওঠে। সত্যি বলছি, মৃত্যুকে সেদিন যেন খুব কাছ থেকে ছুঁয়েছি। ট্রলার দুলছে সর্পিল বাতাসে। এ যেন সমুদ্রবুকে মরণ প্রেম খেলা চলছিলো। তবে খারাপ সময় দ্রুত কেটে গেলো। সী সিকনেসে আক্রান্ত হয়ে দু’জন অলরেডি গলা ভরে বমি করেছে। বিকাল ৩টা ৩০-এ আমরা গন্তব্যতে পৌঁছাই। ওদিকে সেইন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাদের আতিথেয়তার দায়িত্ব নিয়েছেন। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আমরা টিমের সাথে যুক্ত হই।  আজ বিকালেই টাকা দেবো। খামে টাকা ভরা হয় ৫০০ করে। সমূদ্র পাড়েই প্রাইমারি লিস্ট করে রাখা মানুষ জড়ো হয়। দারুণভাবেই সব শেষ হয়। সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। পশ্চিমাকাশে হেলে পড়া সূর্যটা যেন কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে, এবার এই পর্যটকবিহীন সমুদ্রটাকে নিজের করে নাও। এবার আমরা ভলান্টিয়ার থেকে পর্যটকের মুখোশ পরে নেই। এলাকার বাচ্চাগুলোর কী আনন্দ আমাদের নিয়ে! ইফতারিতে স্পেশাল ডাবের পানি আমাদের ক্লান্তি দূর করে দিলো। বেরিয়ে পড়ি রাতের সেইন্টমার্টিনের রূপ দর্শনে। এলাকার এক স্থানীয় ভাইয়ের বাসার চুলায় উড়ছে গরম ভাতের ধোঁয়া আর লবনাক্ত সামুদ্রিক মাছ। চাঁদের কণা ছড়িয়ে পড়েছে সমুদ্রের নোনা জলে। রাতের সী-বীচে আমরা হাজির হয়েছি ফুটবল নিয়ে। একদম নীরব ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকা সেইন্টমার্টিন কেউ হয়তো দেখেনি আমাদের মতো। পেট ভরে খেয়ে নিলাম রাতের খাবার।
প্রায় দেড়টার দিকে আমরা ছুটে যাই জেটিতে। দেখতে পাই জেলেদের সদ্য ধরে নিয়ে আসা মাছের সাথে তাজা কাঁকড়া। ফ্রিতেই আমাদেরকে ভালোবেসে তুলে দেয় তারা। পর্যটন সময়ে যার দাম অনেক বেশিই থাকে। বীচের পাশেই আগুন জ্বেলে পাশের বাসা থেকে আনা হলুদ আর লবনে সিদ্ধ কাঁকড়ার শ্বাসে কামড় দিয়ে আমরা কেমন যেন আদিম এক নোনতা জীবনের স্বাদ নেই। প্রাণভরে আসে সমুদ্র তীরে বিছানো পাটিতে শুয়ে, চাঁদের আলোর রূপালি স্পর্শে।  উন্মাদ হাওয়া কানে কানে বলে যায় জীবনের সেরা রাতটা হয়তো পার করছো। ভেজা শরীরে ঘুরে দেখি তালাবদ্ধ সব হোটেল মোটেল। ধূলা পড়েছে দরজা-তালায়। পড়ে আছে ঝড়ে ঢলে পড়া আহত-নিহত গাছ। ভূতুড়ে অদ্ভুত এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আমরা সম্মোহিত— অদ্ভুত কোমল মায়ায়। ভোরের দিকে আবার সী-বীচে চেয়ারে বসে আছি। ভাটায় সমুদ্র যেন খাল হয়ে যাচ্ছে। মেঘ নেমে এসেছে দূর পাহাড়ের গা বেয়ে। প্রতিদিনকার সূর্যের জন্ম হলো চোখের সামনে ক্লান্তি ভর করে। চেয়ারম্যানের দেয়া থাকার কটেজে ক্লান্তির শরীর ঘুমিয়ে নেয়। ঘুম ভাঙে ১১টায়। চটজলদি রেডি হয়ে যাই কারণ আবার যে ফিরতে হবে। এলাকার অনেকেই জড়ো হয়েছে বিদায় দিতে। সবাই বলছে কিছুদিন থেকে যেতে। আমার চোখ ছলছল করে ওঠে। মানুষের ভালোবাসা আর সেইন্টমার্টিনের লাবণ্য আমায় থমকে দেয়। মন বলে, আরও কিছুদিন যদি থাকতে পারতাম! জীবন ব্যস্ততায় ব্যাকপ্যাকটা কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে নিজেকে বলি, খুব শীঘ্রই আবার আসছি হাসিখুশি সেইন্টমার্টিনকে দেখতে…

  •  The march to Saintmartin
  •  Bangladesh
  •  Saintmartin
  •  Bus
  •  Free of Cost (Arranged By Chairman)
  •  Free of cost (Aerangged By local people)
  •  You went there to be their side & return they cared us a lot

0 comments

Leave a comment

Login To Comment