মেঘ পাহাড়ের গ্রামে
মন টা যেহেতু ভ্রমন পিপাসু,, কাজেই রাতের গহীন ভালোবাসার প্রেমে পড়তে হয় মঝে মাঝে, তেমনি এক রাতের প্রেমে পড়ে রওনা হলাম মেঘ পাহাড়ের গ্রামে, যেখানে পাহাড় আর মেঘ রোদ্দুর এর খেলা অবিরাম খেলে চলে প্রকৃতি, জ্বী…আপনারা ঠিক বুঝতে পেরেছেন, আমাদের “গালিচা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস” এর “”সাজেক”” ট্যুরের কথা ই বলছি।
ভোর বেলা যখন খাগড়াছড়িতে বাস চলছিলো অবাক হয়ে তাকানো ছাড়া কিছু বলার ছিলনা, বার বার মনে হচ্ছিলো বিধাতার এই অপার সৌন্দর্যের সৃষ্টি আমাদের জন্যই তো। স্নিগ্ধ ভোরে দেখা সবুজ পাহাড়ের ফাক দিয়ে যখন নরম-কোমল সূর্য উঁকি মেরে তার অস্তিত্বের জানান দেয় ঠিক তখন চুপচাপ থাকা পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা শিশিরকণা চিকচিক করছিল, মনে হচ্ছিলো যেন পাহাড় রৌদ্র স্নানে মগ্ন।
পৌছে গেলাম দিঘীনালা, যেখানে ছিল আমাদের আগেই ঠিক করা নয়ন দার গাড়ি, নয়ন দার কথা না বললেই নয়, অসম্ভব ভালো মানুষ, নাস্তা সেরে গাড়ির ছাদে করে রওনা করলাম মোহনীয় গন্তব্যের পথ সাজেকে, পুরোটা রাস্তা ছিল রোলার কোষ্টার রাইড। পথে যেতে যেতেই অনেক উপভোগ করা যায়,
শুরু হলো ভ্রমণের পরিপূর্ণতা।।।।।।
হাজাছড়া ঝর্ণা : গাড়ি থেকে নেমে তৃষ্ণার্থ হৃদয়ের আকুলতা নিয়ে ছুটে চলেছি হাজাছড়া ঝর্ণার পথে। হুম, ঝর্ণা আমাদের হতাশ করেনি। ঝর্ণার শীতল পানির তোড়ে পা ভিজিয়ে মরু প্রায় তৃষ্ণার্থ মন টা পেলো সর্গীয় সুখ। তাতে মন ভরলেও কিছুটা অপূর্ণতা ছিলই, তাই চলে গেলাম দড়ি বেয়ে ঝর্ণার উপরের পাশে, সেখানে স্নান করে অপূর্ণতার পূর্ণ সমাপ্তি।
আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?🙄
ঘুরাঘুরির সমাপ্ত বলিনি তো😶
বলেছি তৃষ্ণার্থ হৃদয়ের অপূর্ণতার পূর্ণ সমাপ্তি।।
শুরু হলো আবার রোলার কোষ্টার রাইড, তারপর থেকে সাজেকের পুরোটা পথ জুড়ে রয়েছে মোহনীয়তা, সেখানে প্রকৃতির মাঝে কেমন যেন একটা আত্বতৃপ্তি কাজ করে, মাঝে মাঝে এমন মনে হয় যেন কোন অতৃপ্ত আত্মা এখানে এলে আত্বতৃপ্তি নিয়ে স্বর্গে ফিরে যাবে।😂 এরই মাঝে গাড়ির ছাদে বসে পাহাড়ের উঁচু নিচু ঢাল বেয়ে কয়েকবার রোদ-বৃষ্টির খেলা দেখে নিয়েছি। বলতে বলতে সাজেকের দোরগোড়ায়। রুইলুই পাড়ায় থাকবো, রুইলুই পাড়ার চূড়ায় উঠার জন্য গাড়ি শেষমেশ একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল, আমরা সেই সুযোগে সেলফিবাজি করে নিলাম সবাই। অবশেষে গাড়ি চালু হলো, এবার রুইলুই পাড়ায় উঠার জন্য মাধ্যাকর্ষণ ও গাড়ির ইঞ্জিনের যুদ্ধ শুরু হলো, ফলাফল প্রতিবারের মত একই, গাড়ির ইঞ্জিন জয়ী হলো। অবশেষে আমরা রুইলুই পাড়ায়, চেক ইন করলাম আগে থেকে রিজার্ভ নেওয়া কটেজে, বারান্দা থেকে কটেজের ভিউ দেখে মুগ্ধ সবাই, ভ্রমণের আনন্দ দ্বিগুন করে দিয়েছে ওই কটেজ টা।
স্টোন গার্ডেন ও হেলিপ্যাড : সাজেকের বিকেল টা হেলিপ্যাডে নয়তো স্টোন গার্ডেনের দোলনায় না কাটাতে পারলে কিছু অপূর্ণতা রয়েই যাবে, ভালো লাগার মতো যায়গা। আর রাতে দেখতে পাবেন হেলিপ্যাডের আসল রুপ, সাদা মেঘদল যখন পুরো হেলিপ্যাড টা গিলে নিবে তখনই দেখতে পাবেন হেলিপ্যাড এর আসল সৌন্দর্য।
বার-বি-কিউ : রাতে বার-বি-কিউ এর সাথে জম্পেশ আড্ডা টা যেন সব ক্লান্তি চূষে নেয়।
কটেজে সকাল : আগেই বলেছিলাম একটা ভালো কটেজ হলে ভ্রমণের আনন্দ টা দ্বিগুন হয়ে যায়, হুম, আমরা বরাবরই ভালো ভিউ দেখার মত কটেজ নিয়ে থাকি, সকলে যখন কটেজের বারান্দা থেকে মেঘ দেখি মনে হয় তখন যেন মেঘ আমাদের ডাকছে গান গেয়ে, এইতো সেই গান।।।
“এসো আমার শহরে, না বলা গল্পে “
সেই সাথে নিজের মনের অজান্তেই চিরোচেনা গান টা বেজে উঠে,
“আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম”
কংলাক পাহাড় : যেখানে না গেলেই নয়, সাজেক আসবেন কংলাক পাহাড় যাবেন না, তা কি করে হয়!!!
হাতে লাঠি নিয়ে যাত্রা শুরু হলো কংলাক পাড়ায়, যখন সবাই উপরে উঠে সবাই “”হা”” হয়ে গেছে, পাহাড়ের সব দিকেই যেন সাদা তুলার ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। আসলে সব ই ছিলো মেঘদল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মেঘের স্পর্শ গায়ে বুলিয়ে অনুভবের সাগরে তরী ভাসানোর অনূভূতি টা মনে হয় কংলাক পাহাড়েই পেয়ে যাবেন।
শুরু হলো সাজেক বিদায়ের পালা এবং বাকি স্পট ঘুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা, আসা-যাওয়ার পথে পাহাড়িরা সবাইকে তাদের ভালোবাসার হাতছানিতে সিক্ত করে তোলে।
পাহাড়ের আনারস, কাঠাল, আম, লটকন খাবেন অবশ্যই, রসালো লটকনের আদিবাসী রস মাখানো নাম “হুজুমগুলু” । আর খাগড়াছড়িতে অবশ্যই আদিবাসী রেস্টুরেন্টে খাবার খাবেন, মাস্ট আইটেম “বাঁশ ভাজি”
রিসাং ঝর্ণা : খাবার শেষে বীরের বেশে বেরিয়ে পড়লাম পাহাড়ের দেশে পাহাড় চষে বেড়াবো বলে, গাড়ির চাকায় উঁচু নিচু পথ মাড়িয়ে চলে এলাম রিসাং ঝর্ণায়। নিজ চোখে না দেখলে এর ভালোলাগা বুঝা দায়,
শুধু একটা কবিতা মনে পড়ছিল সতেন্দ্রনাথ দত্তের।
“”চপল পায়ে কেবল ধাই,
কেবল গাই পরীর গান,
পুলক মোর সকল গায়,
বিভোল মোর সকল প্রান””
তারেং : যদি খাগড়াছড়ি শহরে উপর থেকে চোখ বুলাতে ইচ্ছে হয়, পাশ দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদীর দিকে তাহলে তারেং যেতেই হবে। কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে মনে হবে সিঁদূরে মেঘে ভয় না পাওয়া মুক্তমনা পখি। যার অনুভূতি কেই সেই বুঝবে।
আলুটিলা গুহা : গুহা মানেই হাতে মশাল জ্বালিয়ে হয়ে যাক একটা দারুন এডভেঞ্চার, যার মাঝে ভয় এবং ভালোলাগা দুটোই কাজ করে।
ঝুলন্ত ব্রীজ : এই ঝুলন্ত ব্রীজ দেখে আমাদের “গালিচা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস” এর ফিচার লেখকে “রায়হান” ভাইয়ের বল দুটো লাইন মনে পড়ে গেলো,
“” দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি,
মাঝখানে ঝুলন্ত ব্রীজ আমি দিবো পাড়ি”””
অসাধারণ সেই যায়গা, সন্ধ্যায় ব্রীজের ওই পাশে বসে আড্ডা জমাতেই ফেরার ডাক চলে এল,
উঠে পড়লাম গাড়িতে, গন্তব্য খাগড়াছড়ির আদিবাসী রেষ্টুরেন্টে, খেয়ে দেয়ে বাসে চেপে রওনা দিলাম যান্ত্রিক ব্যস্ত নগরী ঢাকার উদ্দেশ্যে।
কেমন যেন এই অজানা পাহাড়ের মায়ায় পরে গিয়েছিলাম,
“” হারিয়ে যাই যত দূরে
আসবো তবু ফিরে আবার,
অজানায় অবিরত মলিন ক্ষত মুছে
ফেলে চিরতরে,
তোমার অসাড় থেমে
থাকা প্রয়াত আগমনে “””
- সাজেক ভ্যালি
- Bangladesh
- সাজেক ভ্যালি
- Car (Hire)
- ৪ জন টুইন ডাবল বেড ৩০০০/-
- দৈনিক খাওয়া ৫০০/- টাকা