Discussion Forum


  1. Image
    Posted by Md. Sabbir Alam| 29 Jan, 2023 4:47 PM

    অবরুদ্ধতার বাইরে কিছুটা সময়

    সময়টা তখন করোনা পরিস্থিতির শেষ দিকে। প্রায় দুই বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কেমন যেন একটা অবরুদ্ধতা বিরাজ করছিল সব জায়গাতে। মহামারি করোনার সংক্রমনের আশঙ্কায় বাড়িতে বসেই কাটিয়ে দিতে হয়েছে সময়গুলো। নাহ আর ভালো লাগছে না এই আবদ্ধ জীবন। হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম করোনা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে, সংক্রমনের ঝুঁকিও কমে এসেছে অনেকটাই। খবরটা শোনা মাত্রই ভাবতে লাগলাম এবার এই অবরুদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠে কিছুদিনের জন্য হাওয়া বদল করে আসাটা খুবই জরুরী। যেই ভাবা সেই কাজ! ভ্রমণের জন্য মায়ের কাছে করে বসলাম এক জোরদার আবেদন। অনেক কাকুতি-মিনতের পর মা রাজি হলেন। পরিবারের সবাই মিলে ঠিক করলাম প্রথমে ছোট মামার বাসা চট্টগ্রাম তারপর সেখান থেকে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যাবো। যাত্রা শুরুর তিন দিন আগে থেকে শুরু হয়ে গেল গোছ-গাছালির প্রস্তুতি। যাত্রার দিন সন্ধ্যায় আমি মা আর ছোট বোন বাসস্টপে দাঁড়িয়ে বাবার আসার অপেক্ষায়। অফিস শেষ করে বাবা আসলেন। তার মুখে কেমন একটা হতাশার ছাপ। অনেকটা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। বাবা জানালেন তার অফিসে খুবই জরুরী একটা কাজ পড়ে গেছে তাই তার যাওয়া হবে না। এক মুহূর্তেই শ্রাবনের মেঘাচ্ছন্ন আকাশটার মতো পরিবারের সবার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। এদিকে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে। বাবা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আমাদের তিনজনকে বাসে উঠিয়ে দিলেন। বাস ছেড়ে দেওয়ার পর আমি আর ছোট বোন বাসের জানালা দিয়ে বাবার দিকে এক দৃষ্টি চেয়ে রইলাম। মাকে দেখলাম মুখটা গোমরা করে বসে আছেন। সেদিন রাতে আমার আর ঘুম হলো না। একদিকে নতুন কিছু দেখার আকাঙ্ক্ষা অন্যদিকে বাবাকে সাথে না পাওয়ার বিষন্নতা দুটোই যেন কুঁড়ে-কুঁড়ে খাচ্ছিল আমাকে। পরদিন সকালবেলা পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্য চট্টগ্রামে। বাস থেকে নেমে সিএনজিতে করে চলে এলাম মামার বাসায়। সেখানে মামা-মামী আর মামাতো ভাইবোনদের সাথে কুশল বিনিময় পর্ব শেষে হালকা খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। সন্ধ্যে নামার একটু আগে উঠলাম ঘুম থেকে। মামাদের বাসার সাত তলার বারান্দা থেকে আশেপাশের এলাকাটার দিকে চোখ বুলালাম একবার। সন্ধ্যায় বসল চায়ের আড্ডা। আমার মামির হাতে বানানো চা সত্যিই অসাধারণ। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা ছিল আমাদের চার ভাই-বোনের গালগল্প। সবাই মিলে ঠিক করলাম মামার বাসায় আমরা চার দিন থাকব তারপর সবাই মিলে যাব কক্সবাজারে। মামার বাসায় দিনগুলো ভালো কাটছিলো, এই চারদিন মামাতো ভাই সায়ানের সাথে বাসার আশেপাশে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয় এদের মধ্যে কিছু ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির মানুষও ছিল। ঘুরতে ঘুরতেই চট্টগ্রামের সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম অনেক অজানা তথ্য। চারদিন কাটানোর পর সকালে বাসে করে রওনা দিলাম স্বপ্নভিলা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। বাস চলছে তার আপন গতিতে । আমার আর তর সইছে না, শুধু একটু পর পর রাস্তার পাশে মাইল ফলক গুলোর দিকে তাকাচ্ছিলাম। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর দেখলাম গন্তব্য আর মাত্র তিন কিলো দূরে। দারুণ এক উত্তেজনা বিরাজ করছে আমার মাঝে। কক্সবাজার আসার রাস্তাটা বেশ বন্ধুর। হয়তো পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে তাই, এছাড়াও বেশ কয়েকবার বাক ঘুরতেও হয়েছে। অবশেষে বাস থামলো এক লাফে নেমে পরলাম সাথে সাথেই একটা উষ্ম হাওয়া দিয়ে কক্সবাজার তার নতুন অতিথিদেরকে অভিনন্দন জানালো। মামা অনলাইনে আগে থেকেই হোটেল ভাড়া করে রেখেছিলেন। আমাদের হোটেলটা ছিল লাবণী বীচ থেকে পায়ে হাঁটা মাত্র পনেরো মিনিটের দূরত্বে। হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করেই বেরিয়ে পরলাম সকলে। বড় রাস্তা ধরে সামনে কয়েক কদম আগাতেই হাতের বা দিকে প্রায় বিশ ফিট চওড়া একটা বালুময় রাস্তা এটা ধরেই যেতে হবে সাগর তীরে। পাঁচ মিনিট সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটার পর চোখের সামনে ভেসে উঠলো চিকচিকে বালিঘেরা দীর্ঘ সেই লাবণী বীচ। বালুচর থেকে পনেরো-বিশ মিটার দূরেই অস্পষ্ট সমুদ্রটা দেখা যাচ্ছে। কিছুটা আগাতেই সমুদ্রের পানিতে পরা দুপুরের রোদটা এমন ভাবে ঝিলিক দিল, যেন একরাশ মুক্ত ছড়িয়ে আছে বীচের উপরে। পানি দেখে আমারা চার ভাই-বোন দিলাম বাঁধন ভাঙ্গা এক দৌড়। কে আগে পানি ছুঁতে পারে তার একটা প্রতিযোগিতা লেগে গেল। অবশেষে সেই স্বপ্নের সাগরকে ছুঁয়ে দেখা। শুধু মা আর মামি বাদে আমরা পাঁচজন সর্বাঙ্গ ডুবিয়ে দিলাম সাগরের নোনা জলে। পানিতে নামার অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু দ্বিধা আর পর্দানশীলতার কারনে শুধুমাত্র হাত-পা ডুবিয়েই সাগরকে ছুঁয়ে দেখার খোরাক মিটাতে হলো মা আর মামিকে। বালুর থেকে যতই দূরে যাচ্ছিলাম সাগরের গভীরতা ততই বাড়ছিল আর ক্রমশ বড়-বড় ঢেউ আমাকে আঘাত করছিলো। শুনেছিলাম সাগরের পানি নোনতা হয় আসলেই বিষয়টা সত্য এই পানি চোখে লাগলে চোখ হালকা জ্বালা-পোড়া করে। সাগরের জলে ভাসতে ভাসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে পরলো। বড়বড় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে আমার শরীরটা বেশ ক্লান্ত। কোনোমতে পানির ভিতর থেকে উঠে এসে বালুচরে গা এলিয়ে দিলাম। সূর্যটা তখন ঢোলে পরেছে পশ্চিমের কোলে। মাথার পিছনে হাত রেখে চিত হয়ে শুয়ে একপানে তাকিয়ে আছি ডুবন্ত সূর্যটার দিকে সাগরের খুবই ছোটছোট শীতল ঢেউ এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার ক্লান্ত দেহটা। আহা এটা যেন আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতির মধ্যে একটি। ইচ্ছে করছে সারাটিজীবন এভাবেই যেন কেটে যায়। এই অসাধারণ মুহূর্তটা যদি কনো ঘোর হয়, তবে এই ঘোর যেন কখনোই না কাটে।--- ( অসমাপ্ত) লেখক : মোঃ সাব্বীর আলম মোবাইল : ০১৯১০৬৬৬৫১৬